সংবাদে প্রকাশ বাংলার বীরভূমের রামপুরহাট সাবডিভিশনের বড়শাল গ্রাম পঞ্চায়েতের একজন উপপ্রধানের মৃত্য হইয়াছে। সংবাদে আরও প্রকাশ মৃত্যু হইয়াছে বুলেটের আঘাতে। সংবাদদাতারা বুলেটটি যে মৃত্যু যন্ত্রের নল হইতে নির্গত হইয়াছিল তাহার ঠিকানা অথবা মালিকের ব্যাপারে নিশ্চুপ ছিল। অবশ্য নিরবতা অখন্ড ছিল না, সন্দেহের তীর সংবাদদাতাদের পৃষ্ঠে চাপিয়া মৃত উপপ্রধানের এক প্রতিবেশীকে নিদের্শ করিয়াছিল।

অতএব প্রত্যাঘাত হইল। ইহার পরে মৃত উপপ্রধানের বাড়ি বগটুই গ্রামে যাহা ঘটিয়াছিল তাহা অদ্যাবধি পরিষ্কার নহে। TV ফাটিয়া বিস্ফোরনের ন্যায় বালখিল্য যুক্তি হইতে পেট্রোল ঢালিয়া অগ্নিসংযোগের দ্বারা খুন – অনেক তত্ত্বের অবতারনা হইতেছে। তার্কিকেরা তর্ক চালাইতেছেন। কিন্তু একটি বিষয়ে জনতা একমত। প্রত্যাঘাতে মৃত্যু হইয়াছে অন্ততঃ ১০ জন মনুষ্যের। তাহারা মরিয়াছেন অগ্নিকুন্ডে পুড়িয়া, ঝামা হইয়া। মৃতদের তালিকায় মহিলা, শিশু এবং সম্ভবতঃ পুরুষও রহিয়াছেন। সম্ভবতঃ। কারন ঝামা হইয়া যাওয়া মৃতদেহগুলি দেখিয়া লিঙ্গভেদ করা শয়তান বা ইবলিশেরও অসাধ্য ছিল।

কিন্তু তথাপি মৃতদেহের শনাক্তকরন হইল। অশান্ত আত্মারা চিরশান্তিময় পৃথিবীর জঠরে কবরস্থ হইলেন। এবং … এবং গল্প জমিয়া উঠিল। রাজনীতিকরা আসিলেন, সমাজ সচেতকরা আসিলেন। শাসক এবং বিরোধীরা পরস্পরের দোষারোপ শুরু করিলেন। পরস্পরকে “ধূল চাটাইবার” এমৎ স্বর্ণ সুযোগের সদগতি করিতে হইবে তো! অতএব, চতুর্দিকে একটি রেরে পড়িয়া গেল। গালাগালি, হুমকি এবং তস্য হুমকিতে বাঙালী মনন এবং সমাজ কম্পিত হইয়া উঠিল।

কিন্তু এই সমাজ-কম্পনের ভিতরে একটি প্রশ্ন বজ্রগর্ভ মেঘের ন্যায় নামিয়া আসিতেছে। প্রশ্নটি হইল- “বিচার কোথায়?” যে ঘোরতর পাষন্ডেরা সুপরিকল্পিতভাবে এতগুলি হত্যা সংঘটিত করিল তাহাদের বিচার কি হইবেনা?

আনন্দবাজারে প্রকাশিত খবর

এ প্রশ্নের উত্তরটি কিন্তু সহজ নহে। সরকারপক্ষীয়রা বলিবেন তদন্ত চলিতেছে, ‘সিট’ গঠিত হইয়াছে, মুখ্যমন্ত্রী ও অন্যান্য মন্ত্রীরা অকুস্থল পরিদর্শনপূর্বক যথাবিধি ব্যবস্থা করিতেছেন। সরকারবিরোধীরা উপরোক্ত প্রতিটি ব্যবস্থারই ছিদ্রান্বেশন করিবেন এবং সেগুলি যে বিষয়টি চাপা দিবারই চেষ্টামাত্র তাহা প্রমাণ করিবেন।

কিন্তু কাজি নুরুল জামান কি করিবেন? মৃতের গাদার মধ্য হইতে তাঁর চার ছেলের সব থেকে ছোটটি কাজি সাজিদুর রহমানকে তিনি খুঁজিতেছেন যে… । ছেলে গিয়াছিল বগটুইএর পূর্বপাড়ায় তাহার শ্বশুরবাড়িতে। ২১ শে মার্চের নারকীয় হত্যাকান্ডে পুড়িয়া ঝামা হইয়া যাওয়া লাশের মাঝে পুত্র এবং পুত্রবধূর দেহের শনাক্তকরণও তিনি করিতে পারেন নাই।

“নৈনং ছিন্দন্তি শস্ত্রাণি নৈনং দহতি পাবকঃ।
ন চৈনং ক্লেদয়ন্ত্যাপো ন শোষয়তি মারুতঃ॥”

আত্মার অবিনশ্বরতার ব্যাখ্যা প্রসঙ্গে শ্রীকৃষ্ণ ইহা বলিয়াছিলেন। আত্মাকে অস্ত্রের দ্বারা কাটা যায় না, আগুনে পুড়ানো যায় না, জলে ভেজানো যায় না, অথবা হাওয়াতে শুকানো যায় না। কিন্তু দেহ? উহা নশ্বর। এবং এই নশ্বর দেহ আগুনে পুড়িলে বা তাহার অপঘাত মৃত্যু ঘটিলে শুধু দেহের মৃত্যু হয় না – একটি সম্ভাবনা, একটি স্বপ্নেরও সমাপ্তি ঘটে। একই সাথে আরও একটি বস্তুর মৃত্যু ঘটে। বিশ্বাসের

অতএব ‘বিচার’ আসুক। বিশ্বাস পূনর্জীবিত হউক।

লেখাটি আপনার ভাল লেগেছে?