ছট পূজা আসলে কি?
প্রশ্ন: ছট পূজা আসলে কী?
উত্তর: ছট পূজা হল সূর্যদেব এবং ছটী মাইয়ার প্রতি উৎসর্গীকৃত একটি প্রাচীন হিন্দু ধর্মীয় উৎসব। এটি মূলত বিহার, ঝাড়খণ্ড, উত্তর প্রদেশ এবং নেপালের তরাই অঞ্চলে পালিত হয়। এই পূজায় সূর্য এবং প্রকৃতির প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করা হয়, যা জীবনের মূল উৎস হিসেবে বিবেচিত।
প্রশ্ন: ছট পূজার উৎপত্তি কীভাবে হয়েছে?
উত্তর: ছট পূজার উৎপত্তি বৈদিক যুগে, যখন সূর্য ছিল প্রধান দেবতা। পরবর্তীতে পুরাণে ছটী মাইয়ার উল্লেখ পাওয়া যায়, যিনি ব্রহ্মার মানসকন্যা কাত্যায়নী হিসেবে পরিচিত। এটি যে অনেক প্রাচীন ধর্মাচরণ, তার প্রমাণ রামায়ণে পাওয়া যায়। মহাভারতে দ্রৌপদী পাশা খেলায় সব হারানোর পর এই ব্রত পালন করেন।
প্রশ্ন: ছটী মাইয়া কে?
উত্তর: ছটী মাইয়া হলেন প্রকৃতির দেবী এবং মাতৃত্বের প্রতীক। মার্কণ্ডেয় পুরাণে তিনি ব্রহ্মার মানসকন্যা কাত্যায়নী নামে পরিচিত। কার্তিক মাসের শুক্ল পক্ষের ষষ্ঠী তিথিতে তাঁর পূজা হয়। কিছু মতে, তিনি সূর্যদেবের বোন, আবার কিছু মতে, তাঁর পত্নী। তিনি পৃথিবীতে জীবের সুরক্ষা এবং কল্যাণ নিশ্চিত করেন।
প্রশ্ন: ছট পূজা কীভাবে পালন করা হয়?
উত্তর: ছট পূজা চার দিনব্যাপী একটি আচার। এতে উপবাস, পবিত্র স্নান, সূর্যোদয় ও সূর্যাস্তের সময় অর্ঘ্য প্রদান এবং ঠেকুয়া নামে একটি বিশেষ প্রসাদ তৈরি করা হয়। ভক্তরা নদী বা পুকুরে দাঁড়িয়ে সূর্যদেবকে প্রণাম করেন।
প্রশ্ন: বিহারে ছট পূজা এত জনপ্রিয় কেন?
উত্তর: মহাভারতে কর্ণ ছিলেন সূর্যদেবের একনিষ্ঠ ভক্ত এবং অঙ্গ রাজ্যের রাজা, যা বর্তমান বিহার ও উত্তর প্রদেশের অংশ। সূর্য উপাসনার এই ঐতিহ্য কর্ণের মাধ্যমে এই অঞ্চলে বিস্তার লাভ করে। রাজা যখন কোনো পূজায় উৎসাহ দেন, তখন প্রজারাও তা উ দযাপন করে।
প্রশ্ন: ছট পূজার আধুনিক গুরুত্ব কী?
উত্তর: আধুনিক যুগে ছট পূজা শুধুমাত্র ধর্মীয় আচার নয়, এটি সংস্কৃতি, ঐতিহ্য এবং সামাজিক বন্ধনের প্রতীক। এটি পরিবেশের প্রতি শ্রদ্ধা এবং জীবনের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশের একটি মাধ্যম।
প্রশ্ন: ছট পূজা এবং মিশরের দেবতা রা ও হাথোরের মধ্যে কী সম্পর্ক আছে?
উত্তর: মিশরের প্রাচীন ধর্মে রা ছিলেন সূর্যদেব এবং প্রধান দেবতা, আর হাথোর ছিলেন প্রকৃতি, মাতৃত্ব ও আনন্দের দেবী। হাথোরকে কখনও কখনও রা-এর কন্যা বা পত্নী হিসেবে বিবেচনা করা হত। তিনি নিজেকে ছয়টি রূপে বিভক্ত করেছিলেন, যার ষষ্ঠ রূপ ছিল মাতৃত্বের প্রতীক।
এই দিক থেকে, হিন্দু ধর্মের ছটী মাইয়ার সাথে হাথোরের একটি ধারণাগত সাদৃশ্য দেখা যায়। ছটী মাইয়া প্রকৃতি ও মাতৃত্বের দেবী, যিনি পৃথিবীতে জীবের সুরক্ষা ও কল্যাণ নিশ্চিত করেন। আবার, বাংলায় বাচ্চা জন্মানোর ছয় দিনের মাথায় যে ষষ্ঠী পূজা করা হয়, হয়ত সেটাই বিহারে গিয়ে “ছট” হয়েছে। সূর্যদেব (পুরুষ) এবং প্রকৃতি দেবী (নারী) একসাথে পূজিত হওয়ার মাধ্যমে সৃষ্টির ভারসাম্য এবং জীবনচক্রের প্রতিফলন ঘটে।