মৃত্যু মুহূর্ত- পর্ব দুই
- মৃত্যু মুহূর্ত- পর্ব এক
- মৃত্যু মুহূর্ত- পর্ব দুই
- মৃত্যু মুহূর্ত- পর্ব তিন
- মৃত্যু মুহূর্ত- পর্ব চার
অবশ্য চরম মুহূর্তে পৌঁছে সকলেই যে ভয়-ভাবনার কথা আউড়েছেন, তা নয়। সাহিত্যসম্রাট বঙ্কিমচন্দ্রের মুখে তাঁর বিদায়কালে যেমন একেবারেই বাস্তব-সম্পর্কহীন একটি অদ্ভুত কথা শোনা গিয়েছিল।
১৮৯৪-এর মার্চের মাঝামাঝি। কলকাতার বাড়িতে শয্যাশায়ী বঙ্কিম। আরও বাড়াবাড়ি হওয়ায় ৫ এপ্রিল থেকে তিনি সংজ্ঞাহীন হয়ে পড়েন। শেষে ৭ তারিখে জ্ঞান ফিরলে ওঁর এক অনুজপ্রতিম প্রিয়জন প্রখ্যাত ঐতিহাসিক রমেশচন্দ্র দত্ত আসেন ওঁকে দেখতে।
এর পর শোনা যাক রমেশচন্দ্রেরই ভাষ্যে,
‘‘বঙ্কিমচন্দ্রের মৃত্যুর পূর্বদিন আমি তাঁহাকে দেখিতে গিয়াছিলাম। তিনি তখন প্রায় অজ্ঞান, কিন্তু আমার গলার শব্দ বুঝিতে পারিলেন। আমার দিকে চাহিয়া সস্নেহে আমার সহিত কথা কহিলেন, আমার একখানি ফটোগ্রাফ চাহিলেন। সে সময় কেন আমার ফটোগ্রাফ চাহিলেন, জানি না।’’ বিশিষ্ট বঙ্কিম-গবেষক অমিত্রসূদন ভট্টাচার্য-র মতে, কোনও প্রিয়জনের সঙ্গে সেই ছিল সম্ভবত সর্বশেষ বঙ্কিম-আলাপ। পরদিন ৮ এপ্রিল শেষদুপুরে চিরবিদায় নেন বাংলা গদ্য সাহিত্যের ‘চার্লস ডিকেন্স’!
শেষ মুহূর্তে মানুষের প্রিয় বস্তু বা প্রিয়জন-প্রত্যাশার এমন নানা উদাহরণ আছে।
১৯৪৫-এ পৃথিবী ছেড়ে যাওয়ার ক্ষণকাল আগে আমেরিকার এক জনপ্রিয় ঔপন্যাসিক থিওডর ড্রেজার শেষ বারের মতো চেঁচিয়ে ওঠেন, ‘‘শেক্সপিয়র! আমি আসছি!’’
ওঁর থেকে কম করেও ৩৩০ বছর আগে লোকান্তরিত ওই প্রবাদোপম নাট্যকারের নামটি জীবনের অন্তপথে এসে কেন তিনি অমন পাগলের মতো উচ্চারণ করলেন? হয়তো স্রেফ পরলোকে বিশ্বাস থেকেই এমন ধারণা তাঁর জন্মানো সম্ভব যে, ঊর্ধ্বলোকে পৌঁছলে প্রিয় নাট্যকারের সান্নিধ্যলাভ ঘটবেই!
নানা রসিকতা দিয়েও বাকযন্ত্রের কাজ-কারবার গুটিয়েছেন অনেকে। ১৯৫৬-য় শেষ শয্যায় শোওয়া প্রখ্যাত ব্রিটিশ কবি ওয়াল্টার ডি লা মারে যেমন। তাঁকে যখন প্রশ্ন করা হয়, কী পেলে তাঁর একটু ভাল লাগবে—মারে মৃদু হেসে বলেন, ‘‘ফল দিতে চাইলে বলব, অনেক দেরি হয়ে গেছে। আর ফুল দিতে চাইলে কিছুটা অপেক্ষা করতে হবে।’’
মৃত্যুকালেও অটুট দম্ভ প্রধানমন্ত্রী উইনস্টন চার্চিলের গলায়।
৯০ পার করা বয়সে ১৯৬৫-র ২৪ জানুয়ারি সকালে তিনি যখন দুনিয়ার গণ্ডি পার করছেন—তখন সেরিব্রাল স্ট্রোকের ধাক্কায় ৯ দিন শয্যাশায়ী থাকা অবস্থাতেও ওঁর শুভানুধ্যায়ীদের হঠাৎই বলে ওঠেন, ‘‘ভগবান লোকটার সামনে বসতে তৈরি আমি। তবে জানি না, আমার সামনে বসার সাহস উনি এখনও জুটিয়ে উঠতে পেরেছেন কি না!’’







