বোরোলিনের ইতিহাস

বোরোলিনের ইতিহাস


ছোট থেকে বড় বোরোলিন এর ব্যবহার করেনি এমন মানুষ খুঁজে পাওয়া দুষ্কর। কেটে যাওয়া, ছড়ে যাওয়া, পুড়ে যাওয়া – যেকোন জ্বালা-যন্ত্রণা মেটানোর একমাত্র ওষুধ- বোরোলিন। আবার ত্বকের পরিচর্যা তেও একই রকম প্রয়োজনীয়। বাঙালি বাড়িতে সবুজ রংয়ের বোরোলিনের একটি টিউব খুব সাধারণ একটি দৃশ্য। আমরা যারা জানিনা তাদের জন্য আজকে বোরোলিন এর ইতিহাস।


সালটা ১৯২৯। বাংলায় শুরু হল এক নতুন আন্দোলন। তবে এই আন্দোলনের অস্ত্র কার্তুজ বা বোমার ছিল না। বিদেশীর বাজারে দেশি ব্যবসায়ীর পথ চলা। তখনও স্থানীয় কেউ পুড়ে গেলে বা দেহে কোনও রকমের ক্ষত হলে ভেষজ উপাদান ব্যবহার করতো। কারণ বিদেশি ক্রিম সাধারণের ধরাছোঁয়ার বাইরে ছিল।

সুরভিত অ্যান্টিসেপটিক ক্রিম, বোরোলিন…


ঠিক সেই সময় বাজারে এলো বাঙালির নিজস্ব অ্যান্টিসেপটিক ক্রিম বোরোলিন। সেই জয়যাত্রা আজও চলছে। এর প্রাণপুরুষ ছিলেন জি ডি ফার্মেসির প্রতিষ্ঠাতা গৌরমোহন দত্ত। ব্রিটিশ সময়কাল থেকে শুরু করে ৮৯ বছর ধরে এখনও সকল বাঙালির অতি প্রিয় ‘সুরভিত অ্যান্টিসেপটিক ক্রিম বোরোলিন’। জওহরলাল নেহরুও নাকি ব্যবহার করতেন বোরোলিন। দেশের ক্রিম বলে কথা! শীত-গ্রীষ্ম-বর্ষা বাঙালির ঘরে বোরোলিনের উপস্থিতি চিরকালীন। এককথায়, বোরোলিন হল ঋতুপর্ণ ঘোষের কথায় ‘বঙ্গ জীবনের অঙ্গ’। ব্রিটিশ রাজত্বকালে দেশি দ্রব্য তৈরি করা এবং টিকিয়ে রাখা যথেষ্ট কঠিন কাজ ছিল।

এ এক অন্য ধরনের লড়াই। কারণ গৌরমোহন দত্তের জি ডি ফার্মেসির বোরোলিন বিদেশি দ্রব্য বর্জন ও দেশি দ্রব্য গ্রহণের আন্দোলনে এক নতুন মাত্রা যোগ করেছিল। এছাড়া তিনি ছিলেন সেই সময়ের কলকাতার ব্যবসায়ী সমিতির সদস্য। তিনি মনে করতেন, বিপ্লব ছাড়াও দেশ স্বাধীন করার জন্য দেশে স্বাধীন ব্যবসায়ী সংগঠন হওয়া প্রয়োজন। যারা দেশি উপাদান প্রস্তুত করবে এবং বিক্রি করে দেশের আর্থিক উন্নতি ঘটাবে। এই উদ্দেশ্যেই ১৯২৯ সাল থেকে সবুজ রঙের টিউবে হাতিমার্কা ক্রিম বোরোলিন আসে বাজারে। প্রথমে ইংরেজরা অনেক চেষ্টা করে বোরোলিনকে বন্ধ করার জন্য। পারেনি।

আজ জি ডি ফার্মেসির কারখানা আছে কলকাতায় ও গাজিয়াবাদে। বর্তমানে এই কোম্পানির প্রধান কর্ণধার গৌরমোহন দত্তের নাতি দেবাশিসদত্ত। তাঁর কথায়, তাঁদের কোম্পানি শুধুই অ্যান্টিসেপটিক উপাদান তৈরি করে না। মানুষ তাঁদের বিশ্বাস করেন, ভালোবাসেন। তাঁরা পরিবেশ পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন রাখার জন্য রিসাইক্যাল করে পুরনো টিউব বা কোট দিয়েই নতুন টিউব তৈরি করেন। তিনি আরও জানান, ১৯৪৭ সালে দেশ যখন স্বাধীন হয় সেই সময় দেশবাসীকে বিনে পয়সায় বোরোলিন বিতরণ করে স্বাধীনতা দিবস উদযাপন করা হয়। এই ক্রিম দেশের ক্রিম। তাই ১৯২৯ থেকে ২০১৮ পর্যন্ত ৮৯ বছরেও স্বমহিমায় বিরাজিত মানুষের মধ্যে। বোরোলিন ছাড়াও এক্ষণ তৈরি করা হচ্ছে সুথল, এলিন, গ্লোসফট, পেনোরাব।

তথ্যসূত্রঃ পশ্চিমবঙ্গ

লেখাটি আপনার ভাল লেগেছে?

লেখক পরিচয় |

Start typing and press Enter to search