বুদ্ধের পরিনির্বান (অজন্তা গুহা ২৬)

শাক্যসিংহ গৌতম বুদ্ধ অধুনা জরাভারে ক্লান্ত। ক্ষত্রিয়শরীরের সুঠাম বাঁধন কালের নিয়মে অবক্ষয়ের পথে হেঁটেছে। ইদানিং শরীরে বাসা বেঁধেছে বার্ধক্যজনিত ক্ষয়রোগ। অবসর হয়েছে এই মরজগৎ ত্যাগ করে তুষিতা স্বর্গে ফিরে যাওয়ার। এখন শুধু সময়ের অপেক্ষা।

ক্লান্ত, রোগগ্রস্ত বুদ্ধ ভিক্ষুশিষ্য আনন্দ সহযোগে এসেছেন মল্ল গণসংঘে। গন্তব্য- শিষ্য চুন্দার ভবন। চুন্দা পেশায় কর্মকার। বুদ্ধের একনিষ্ঠ ভক্ত সে, অমিতাভের সেবায় সদা নিয়োজিত। চুন্দার গৃহেই আজ ভোজন গ্রহণ করবেন সশিষ্য গৌতম বুদ্ধ। ভিক্ষুশ্রেষ্ঠ গৌতমের জন্য আয়োজনের খামতি রাখেননি কর্মকার চুন্দা। পঞ্চব্যঞ্জনে সাজিয়েছেন বুদ্ধের নৈবেদ্য। সাধ্যমত উৎকৃষ্ট বস্তুরাজি আহরণ করেছেন তিনি শাক্যমুনির সেবার জন্য। কেবলমাত্র বুদ্ধের ভোজনের জন্যই প্রস্তুত করিয়েছেন উৎকৃষ্ট “শূকরমদ্ধব”।

ধীরপদে ভোজনকক্ষে উপনীত হলেন বুদ্ধ। সমুখে সাজানো অন্নময় পাত্র। কৃপা, করুণাময় দৃষ্টিতে দেখলেন সমস্ত ভোজ্যবস্তুকে। তারপর একে একে সমস্ত পদ গ্রহণ করে ভোজন করলেন তাঁর জন্য তৈরি করা শূকরমদ্ধব। ভোজন শেষে তৃপ্ত বুদ্ধ আসন ত্যাগ করলেন। কিন্তু কিছুক্ষণের মধ্যেই সিদ্ধার্থের শরীরে শুরু হলো এক অসম্ভব বেদনা। শারীরিক স্থিতি ক্রমেই অবনতির দিকে চলে যেতে লাগলো। শুরু হলো আমাশয়। জরাভারে ক্লিন্ন শরীর দুর্বল থেকে দুর্বলতর হয়ে যেতে লাগলো। আমাশয়ের কোনরকম নিরাময় না দেখে শিষ্য আনন্দ চুন্দার ভবন ছেড়ে চলে যাওয়াই সমীচীন মনে করলেন। আনন্দ সহ বাকি শিষ্যগণ বুদ্ধের অনুগমন করলেন। পথমধ্যে বুদ্ধের অবস্থা ক্রমেই সঙ্গীন হয়ে উঠলো। বারংবার মলত্যাগে জীর্ণ শরীর ক্রমেই দুর্বল হয়ে যেতে লাগলো। এদিকে কালরোগ আমাশয়ের কোনরকম নিরাময় নাই।

রোগক্লিন্ন শরীরের জন্য প্রয়োজন একটু বিশ্রাম। একটু জল পেলে মনে হয় ভালো হতো, একটু শীতল, পুষ্করিণীর জল। দূরে দেখা যায় শাল বৃক্ষের সমাহার। সেই বৃক্ষতলে বিশ্রাম নেওয়া আশু প্রয়োজন। ভিক্ষুশিষ্য আনন্দ সহযোগে রোগগ্রস্ত গৌতম বুদ্ধ প্রবেশ করলেন মল্লনরপতিদের শালবনে। বৃক্ষতলের নির্মল ছায়ায় প্রাণে যদি একটু স্বস্তি মেলে। বুদ্ধের বিশ্রামের জন্য আনন্দ দুটি শালবৃক্ষের মাঝে শয্যা প্রস্তুত করে দিলেন।

সন্ন্যাসীর শয্যা অর্থাৎ এক খন্ড গৈরিক বস্ত্র। সেই শয্যাতেই পরিশ্রান্ত শরীর এলিয়ে দিলেন শাক্যসিংহ গৌতম বুদ্ধ। চেতনা ক্রমেই অবশ হয়ে পড়ছে, নিঃশ্বাস ত্যাগ হচ্ছে ক্ষীণ থেকে ক্ষীণতর। বুদ্ধের শরীর ধীরে ধীরে শীতল হয়ে গেল। এই কি তবে মৃত্যু? এই কি সেই জগতের চরম সত্য? এতদিনে মৃত্যুকে অনুভব করলেন সিদ্ধার্থ। গৌতম বুদ্ধের হলো মহাপরিনিব্বান।

লেখাটি আপনার ভাল লেগেছে?