অর্গানিজম ৪৬বি
যে-সে স্কুইড নয়। এ বড় ভীষণ স্কুইড। এর ক্ষমতা শুনলে হাড়হিম হয়ে যায়। নিজের শিকারকে সম্মোহন করতে পারে এই স্কুইড। নিজের বিষ ব্যবহার করে ১৫০ ফুট দূরে থাকা শিকারকে অবশ করে দেয়। জল্পনা, এই স্কুইডকে নাকি অস্ত্র হিসাবে ব্যবহার করছে রাশিয়া। সত্যিই কি তাই?
১৯৫৭ সালে আন্টার্কটিকায় ভস্টক গবেষণা কেন্দ্র খোলে রাশিয়া। উদ্দেশ্য ছিল বরফের নীচে জীবজগতের হালহদিস জানা। ১৯৭৪ সাল থেকে বরফের নীচে কী রয়েছে, তা জানতে গবেষণা শুরু করেন রুশ বিজ্ঞানীরা। ওই গবেষণা কেন্দ্র তৈরি হওয়ার পর বরফঢাকা হ্রদটির নামও হয় ভস্টক।
৩০ বছর ধরে বরফ খুঁড়ে গিয়েছিলেন বিজ্ঞানীরা। শেষে ২০১২ সালের ফেব্রুয়ারিতে প্রথম বার অদ্ভুত এক জীবের খোঁজ পান বিজ্ঞানীরা। সে কথা প্রথম বার প্রকাশ্যে আসে ২০১৬ সালে। ফাঁস করেন ওই গবেষক দলের এক বিজ্ঞানী।
আন্টার্কটিকায় ভস্টক হ্রদের গভীরে গবেষণা চালানোর সময় অদ্ভুত এক জীব খুঁজে পেয়েছিলেন রুশ বিজ্ঞানীরা। ১০ মিটার লম্বা। রয়েছে ১৪টি শুঁড়। নাম দেন অর্গানিজ়ম ৪৬বি। যদিও সেই আবিষ্কার নিয়ে ক্রমেই রহস্য ঘনীভূত হয়েছে।
অ্যান্টন পাডালকা নামে এক বিজ্ঞানী দাবি করেন, রুশ বিজ্ঞানীদের দলে ছিলেন তিনিও। ভস্টক হ্রদে মিলেছিল সেই অদ্ভুত জীব। কিন্তু তাঁদের সেই আবিষ্কার প্রকাশ করতে দেয়নি রুশ প্রশাসন।
কেন রুশ প্রশাসন বিষয়টির প্রচার চায়নি? এই নিয়ে অ্যান্টন ভয়ঙ্কর অভিযোগ করেন। জানান, প্রশাসন আসলে ওই স্কুইডটিকে অস্ত্র হিসাবে ব্যবহার করতে চায়। সে কারণে এর বংশবৃদ্ধি করাচ্ছে। অ্যান্টন জানিয়েছেন, আন্টার্কটিকা অভিযানে গিয়ে মিষ্টি জলের হ্রদে সেই স্কুইডটিকে খুঁজে পেয়েছিলেন তাঁরা। বরফঢাকা হ্রদে প্রায় দু’মাইল গভীরে মিলেছিল সেই জীব।
অ্যান্টন দাবি করেন, তাঁদের গবেষক দলের দু’জন বিজ্ঞানী সেই স্কুইডের শিকার হয়ে প্রাণ হারিয়েছিলেন। তিনি জানিয়েছেন, অর্গানিজ়ম ৪৬বির সঙ্গে প্রথম সাক্ষাৎ হার মানাতে পারে অনেক ভয়ের সিনেমাকে।
প্রথম দিকে রুশ বিজ্ঞানীদের দলটি বুঝতেই পারেনি যে, কী হচ্ছে। অ্যান্টনের কথায়, ‘‘ভস্টক হ্রদের কাছে গিয়ে প্রথম দিনই অর্গানিজ়ম ৪৬বির সঙ্গে সাক্ষাৎ হয়েছিল আমাদের। আমাদের রেডিয়ো নিষ্ক্রিয় করে দিয়েছিল সেই জীব। সবটাই ইচ্ছাকৃত ভাবে করেছিল সে।’’
কী ভাবে শিকার ধরে অর্গানিজ়ম ৪৬বি? তা-ও জানিয়েছেন বিজ্ঞানী অ্যান্টন। তাঁর কথায়, ‘‘জলে নিজের বিষ মিশিয়ে দেয় জীবটি। ১৫০ ফুট দূর থেকে সেই বিষের মাধ্যমে শিকারকে অবশ করে ফেলে। ফলে শিকার আর নড়তে-চড়তে পারে না।’’
অ্যান্টনের এক সহকর্মীকে এ ভাবেই খুন করেছিল অর্গানিজ়ম ৪৬বি। অ্যান্টনের কথায়, যে জলে বিষ মিশিয়েছিল স্কুইডটি, সেখানে পা দেন ওই বিজ্ঞানী। হাসতে হাসতে ক্রমেই হ্রদে এগিয়ে চলেন। তার পর সব শেষ।
বিজ্ঞানী অ্যান্টন জানান, আমাদের চোখের সামনেই নিজের শুঁড় দিয়ে ওই বিজ্ঞানীর মাথা ছিঁড়ে দেয়। তার পর নিজের মুখে পুরে দেয় শরীরটা। দেখে মনে হচ্ছিল, স্কুইডটি সম্মোহন করেছে ওই বিজ্ঞানীকে। আমরা নিরুপায় হয়ে গোটা ঘটনা দাঁড়িয়ে দেখছিলাম। অ্যান্টনের দাবি, অর্গানিজ়ম ৪৬বি রূপ বদলাতে পারে। প্রয়োজনে নিজের আকারও বদলে ফেলে। আর তা করেই বিজ্ঞানীদের দলটির উপর নজর রেখেছিল সে। প্রাণীটির দৈর্ঘ্য প্রায় ৩৩ ফুট। অ্যান্টন জানান, এক এক সময়ে মনে হয়েছিল স্কুইড নয়, অর্গানিজ়ম ৪৬বি আসলে একজন সাঁতারু। তাঁর কথায়, ‘‘এক বার আমরা ভেবেছিলাম কোনও সহকর্মী আমাদের দেখে সাঁতার কেটে হ্রদের মধ্যে দিয়ে এগিয়ে আসছেন। যখন এক বিজ্ঞানী বুঝতে পারেন যে এটা অন্য কিছু, তখন তাঁকে আক্রমণ করে মুখে পুরে দেয় অর্গানিজ়ম ৪৬বি।’’
অ্যান্টনের আরও দাবি, নিজের শুঁড় দিয়ে শিকার ধরে অর্গানিজ়ম ৪৬বি। এমনকি শুঁড়টি তাঁর দেহ থেকে আলাদা করলেও তা শিকার ধরতে সক্ষম। তাঁর দাবি, স্কুইডের একটি শুঁড় কেটে দেওয়া হয়েছিল। তার বেশ কয়েক ঘণ্টা পরও ওই শুঁড়টি টিপে ধরেছিল এক বিজ্ঞানীর গলা। শেষে মারা যান ওই বিজ্ঞানী।
অ্যান্টন জানিয়েছেন, টানা পাঁচ দিনের চেষ্টায় বাগে এসেছিল অর্গানিজ়ম ৪৬বি। একটি ট্যাঙ্কে ভরে ফেলা হয়েছিল তাকে। ভূপৃষ্ঠে আনতেই তাকে ছোঁ মেরে নিয়ে যায় রুশ প্রশাসন। অপেক্ষারত সংবাদমাধ্যমকে জানিয়েছিল, হ্রদের নীচ থেকে কোনও ভয়ঙ্কর জীব মেলেনি।
বিপদ যে আসন্ন, বুঝতে পারেন অ্যান্টন। পালিয়ে যান রাশিয়া ছেড়ে। পরে তিনি দাবি করেন, রাশিয়া আসলে ওই স্কুইডটিকে অস্ত্র হিসাবে ব্যবহার করতে চাইছে। এর ফল ভয়ঙ্কর হতে পারে। নিজেদের পরিকল্পনা বাস্তবায়িত করার জন্য ওই স্কুইডের বংশবৃদ্ধি ঘটাতে চায় তারা।
অ্যান্টন দাবি করেন, কিছু অক্টোপাস একসঙ্গে দু’লক্ষ ডিম পাড়ে। অর্গানিজ়ম ৪৬বি অতগুলো ডিম এক সঙ্গে পাড়লে চরম বিপদ ঘনিয়ে আসতে পারে। ধ্বংস হতে পারে মানবসভ্যতা। রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন কি এ রকমই কিছু করার চেষ্টা করছেন? কী ভাবছেন তিনি? বিজ্ঞানীর দাবিতে উদ্বেগ আরও বেড়েছে।