অভিযোগ চৌর্য্যবৃত্তির। সাজা ছয় মাসের কারাদণ্ড। পাঠক বলিবেন, ইহা আর বড় কথা কি? অপরাধী শাস্তি তো পাইবেই। ধীরে পাঠক, ঘটনাটি অতখানি সহজ নহে।

ঘটনাস্থল জার্মানির বেলিফিল্ড শহর। ঊনচল্লিশ বৎসর বয়স্কা মহিলাটির সম্পর্ক হইয়াছিল বিয়াল্লিশ বৎসর বয়স্ক পুরুষটির সহিত। সম্পর্কের শর্ত শুধুমাত্র দৈহিক তাড়নার নিবৃত্তি অর্থাৎ উদ্দাম যৌনতা। সুতরাং সেভাবেই সবকিছু চলিতেছিল৷ কিন্তু মদনদেব শুধুমাত্র মদনভাব জাগাইয়াই থামেন না। দৈহিক তাড়নার নিবৃত্তির পশ্চাতেই আসিয়া পড়ে হৃদয়বৃত্তি।

ফলত: গন্ডগোল হইয়া গেল। মহিলাটি ‘শুধুমাত্র যৌনতাই সম্পর্কের একমাত্র উদ্দেশ্য’ এহেন শর্তের কথা ভুলিলেন, পুরুষটিকে ভালোবাসিলেন। এই বিশেষ অনুভূতিতে কিন্তু পুরুষটি আক্রান্ত হয়েন নাই। তিনি সম্পর্কের মূল শর্তের খেলাপি হইলেন না। উদ্দাম যৌনতা এবং হৃদয়বৃত্তির মধ্যের প্রাচীরটি তাঁহার নিকট অলঙ্খ্যই থাকিয়া গেল।

সাধারন হিসাবে মহিলা এবং পুরুষটির সম্পর্কের এখানেই ইতি হইতে পারিত। কিন্তু মহিলাটি এক অদ্ভূত পরিকল্পনা করিলেন। বিশ্বে এমন কল্পনা কেহ করিয়াছেন বলিয়া শোনা যায় নাই। পুরুষটিকে বাগে আনিবার জন্য তিনি চুরি করিলেন। তাহাও তিনি সম্পাদন করিলেন পুরুষটির সহিত উদ্দাম যৌনলীলা চলাকালীন। কিন্তু কি চুরি হইল?

মহিলাটি চুরি করিলেন পুরুষটির বীর্য, সঙ্গমকালে একটি গর্ভনিরোধকে ক্ষুদ্র ছিদ্র করিয়া পুরুষটির বীর্য, তাহার অজান্তেই, তিনি গ্রহণ করিলেন। নিজের গর্ভাবস্থার কথা যখন তিনি পুরুষটিকে জানাইলেন, সে প্রথমেই মামলা করিল ধর্ষনের এবং পরে বীর্য চৌর্য্যবৃত্তির। হ্যাঁ পাঠক, বীর্য চৌর্য্যবৃত্তির! জার্মানির বিচারালয় রায়দানকালীন মন্তব্য করিয়াছে এমন ঘটনা ইতিপূর্বে আদালতে আসে নাই এবং শাস্তি স্বরূপ মহিলাটিকে ছয় মাসের কারাদন্ড দিয়াছে।

ভালোবাসা কত সহস্র বৎসর ধরিয়া কত দেশে কত কান্ড ঘটাইয়াছে। কখনও খুন, কখনও আত্মহত্যা, কখনও উন্মত্ততা – কখনও সে সৃষ্টি করিতেছে কখনও বা ভাঙ্গিতেছে। কিন্তু ভালোবাসার জন্য চৌর্য্যবৃত্তির অপরাধী হিসাবে সাব্যস্ত হওয়া বোধহয় বিরল। তাহাও এমন এক বস্তু চুরি যাহা গর্ভনিরোধকের কল্যাণে বর্জ্য হিসাবেই স্বীকৃত। আসলে এখানে অপরাধ বিশ্বাসহীনতার। মহিলা তাহার পুরুষ সঙ্গীর দ্বারা গর্ভবতী হইতে চাহিয়াছেন। কিন্তু তাহার অভিপ্সা পুরুষটি মানিয়া লন নাই। পুরুষটির নিকট ইহা সম্পর্কের শর্তের বিরোধী এবং একপ্রকার ব্ল্যাকমেইল। ভালোবাসার জন্য মহিলাটি পুরুষটিকে বাধ্য করিতে চাহিয়াছিলেন শর্তের প্রাচীর ডিঙ্গাইয়া সম্পর্কটিকে দেহ হইতে মনে আনিতে। কিন্তু পুরুষটির নিকট ইহা প্রকাশিত হইল বিশ্বাসহীনতার পরাকাষ্ঠা হিসাবে। তিনি ভয় পাইলেন, সম্পর্কের শিকলে বাঁধা পড়িবার ভয়, সন্তান সম্পর্কিত আইনি জটিলতার ভয় সর্বোপরি দায়িত্ব লইবার ভয়। অদ্ভুত পরিস্থিতি – ভালোবাসায় একজন নীতিজ্ঞান ভাঙ্গিলেন, আর একজন সঙ্গীকে তুলিলেন কাঠগড়ায়। যে উদ্দাম যৌনতা তাহাদের সম্পর্কের ভিত্তি ছিল তাহাকে স্বচ্ছন্দে প্রথমে ‘ধর্ষণ’ আখ্যা দিয়া পুরুষটি মহিলাটিকে বীর্য তস্করের তকমা দিলেন।

কিন্তু পাঠক একটি বিষয়ে নিশ্চিত থাকিবেন, এই ইঁট কাঠ কংক্রিটের জঙ্গলে প্রেম দূর্লভ হইলেও নিশ্চিহ্ন নহে। প্রেমিক এই চরম ভোগবাদী পৃথিবীতেও রহিয়াছেন এবং নানা আপাত পাগলামি করিতেছেন। ইহাই আশার!

লেখাটি আপনার ভাল লেগেছে?