আজ প্রফেসর ত্রিলোকেশ্বর শঙ্কুর জন্মদিন। কৌশিক মজুমদারের অনবদ্য লেখনীতে ত্রিলোকেশ্বর শঙ্কু-র নানা জানা অজানা তথ্য উঠে এসেছে। প্রোফেসর শঙ্কুকে এভাবে চেনার সুযোগ হারাবেন না, পড়ে ফেলুন...

শঙ্কু সৃষ্টি এবং তারপর…

আজ প্রফেসর ত্রিলোকেশ্বর শঙ্কুর জন্মদিন।

সত্যজিৎ রায়

১৯৬৫ সালে নিউ স্ক্রিপ্ট থেকে প্রকাশিত ‘প্রোফেসর শঙ্কু’ নামের বইটিতে এমনভাবেই শঙ্কর পরিচয় দেন সত্যজিৎ রায়। সংক্ষিপ্ত কিন্তু রহস্যঘন অদ্ভুত এক গা ছমছমে ভাবের সঙ্গে আবিষ্ট হয় পাঠক। নজরকাড়া বইয়ের মলাটে ঋজু। দৃঢ় সরলরৈখিক টানে বিড়ালকাঁধে এক টাকমাথা ভদ্রলোক গম্ভীরভাবে ডায়রি পাঠে নিমগ্ন। পিছনে বকযন্ত্র, টেস্টটিউবের সারি। কিন্তু বিড়ালের মুখের অদ্ভুত ফিচেল হাসি যেন পাঠকদের আশ্বস্ত করে, “অতটাও সিরিয়াস বিষয় নয় হে.” তবু খুব কম পাঠকই হয়তো সেদিন বুঝতে পেরেছিল যে আর্থার সি ক্লার্ক, রে ব্র্যাডবেরি বা আইজাক অ্যাসিমভের সঙ্গে এক আসনে বসার মতো অসামান্য এক চরিত্রের সৃষ্টি হল আমাদের এই বঙ্গদেশে যার নাম ত্রিলোকেশ্বর শঙ্কু। সন্দেশের ভার হাতে নেওয়ার পর পাঠকদের দাবি মেটাতেই কলম ধরেন সত্যজিৎ। ফেলুদা তখনও ভবিষ্যতের গর্ভে (প্রকাশ ১৯৬৫) তার প্রায় চার বছর আগেই সেপ্টেম্বর ১৯৬১-তেই প্রফেসর শঙ্কুর আবির্ভাব। গল্পের নাম ‘ব্যোমযাত্রীর ডায়রি’ পরবর্তীকালে সত্যজিৎও জানিয়েছেন যে আর্থার কোনান ডয়েল রচিত প্রফেসর চ্যালেঞ্জার চরিত্রটির স্পষ্ট প্রভাব শঙ্কুর উপরে। কিংবা হয়তো শুধু তা-ই নয়। ‘ব্যোমযাত্রীর ডায়রিতে শঙ্কুর গবেষণা ঠিক যেন নিধিরাম পাটকেলের মতো, আর তার অ্যাডভেঞ্চার হেঁসোরাম হুঁশিয়ারের ছোঁয়া কোথায় যেন বর্তমান। নিধিরাম পাটকেলের গন্ধবিকট তেল যেমন তৈরি হয়েছিল বিছুটির আরক, লঙ্কার ধোঁয়া, ছারপোকার আতর, গাঁদালের রস আর পচা মুলোর এক্সট্রাকট দিয়ে ঠিক তেমনই শম্ভুর রকেট তৈরি হয় অদ্ভুত এক মিশ্রণের ফলে সৃষ্ট ধাতু দিয়ে। যাতে আছে ব্যাঙের ছাতা, সাপের খোলস, কচ্ছপের ডিমের খোলা আর ট্যানট্রাম বোরো প্যাক্সিনেট। রসায়নের প্রাথমিক শ্রেণির ছাত্রও বলবে এভাবে কোনও ধাতু পাওয়া যায় না। তবু প্রথম অভিযানে সুকুমার-সৃষ্ট চরিত্র দুটির মতো শঙ্কুও যেন ননসেন্স-এর খেলায় মাতেন। টাফা গ্রহের অধিবাসীদের আচরণেও যেন সেই বন্দাকুশ পাহাড়ের প্রাণীদের সঙ্গে মিল পাই। কিন্তু স্বভাবে যুক্তিবাদী সত্যজিৎ যিনি কিনা এরপর ফেলুদার মতো চরিত্র সৃষ্টি করবেন। কতদিন আর মাতবেন ননসেন্স নিয়ে? তাই শম্ভুর বিবর্তন ঘটে। স্থিতধী, সৌম্য, প্রাজ্ঞ, ঋষিতুল্য শঙ্কু আবির্ভূত হন ধীরে ধীরে। প্রফেসর শঙ্কুর কথা লেখার ক্ষেত্রে সবচেয়ে মজার হল এই যে তাঁর প্রথম অভিযান ‘ব্যোমযাত্রীর ডায়রি’ আদতে তাঁর শেষ অভিযান। টাফা নামক অজানা গ্রহে আটকে পড়ে আর লিখতে পারেননি তিনি। আর ১৯৯০-এর শারদীয়া আনন্দমেলায় প্রকাশিত ‘স্বর্ণপর্ণী’ শঙ্কুর শেষ সম্পূর্ণ অভিযান অথচ দেখুন সেখানে উল্লেখ আছে শঙ্কুর প্রথম অভিযানের। শঙ্কুর জীবনচর্যার ক্ষেত্রে কালানুক্রম বজায় রাখা তাই বেশ শক্ত। তবু সব মিলিয়ে মিশিয়ে শঙ্কুর সম্পর্কে তারই লেখা থেকে যা উদ্ধার করা যায় সেটা এইরকম।

“প্রোফেসর শঙ্কু কে? তিনি এখন কোথায়? এটুকু জানা গিয়েছে যে তিনি একজন বৈজ্ঞানিক। কেউ কেউ বলে যে তিনি নাকি একটা ভীষণ পরীক্ষা করতে গিয়ে প্রাণ হারান। আবার এও শোনা যায় যে তিনি কোনও অজ্ঞাত অঞ্চলে গা-ঢাকা দিয়ে নিজের কাজ করে যাচ্ছেন, সময় হলেই আত্মপ্রকাশ করবেন।”

প্রফেসর শঙ্কুর বাবা ত্রিপুরেশ্বর ছিলেন গিরিডির বিখ্যাত চিকিৎসক। উশ্রী নদীর ধারে তাদের বাড়ি। ১৬ জুন, মানে আজকের দিনে (একটি ডায়রিতে অবশ্য ১৬ অক্টোবর আছে) শঙ্কুর জন্মদিন। মাত্র ১২ বছর বয়সে ম্যাট্রিকুলেশন, ১৪-য় আইএসসি আর ১৬-তে ফিজিক্স কেমিস্ট্রিতে অনার্স নিয়ে বিএসসি। কুড়ি বছর বয়সে স্কটিশচার্চ কলেজে পদার্থবিজ্ঞানের অধ্যাপক। পরিবর্তন ঘটেছে তার চেহারাতেও। তেরো বছরে মাথায় প্রথম পাকাচুল দেখা যায়, সতেরোতে টাক পড়া শুরু আর একুশে মাথাজোড়া টাক ঘাড় আর ব্রহ্মতালুর দু’-এক গাছা চুল বাদে। প্রহ্লাদ নামের এক চাকরের সঙ্গে বিড়াল নিউটনকে নিয়ে নিজ গৃহে গবেষণায় মত্ত তিনি। পৃথিবীর ৬৯টি ভাষা রপ্ত তাঁর। বিশ্বে তার নামডাক মূলত আবিষ্কারক বা inventor রূপেই।

পাঁচটি দেশের মহা মহাবিজ্ঞানীরা টমাস আলভা এডিসনের পরেই প্রফেসর শঙ্কুকে স্থান দিয়েছেন। শঙ্কুর ৩১ বছরে মোট ৪০ টি ডায়রিতে ধরা আছে তাঁর ৭২টি আশ্চর্য আবিষ্কারের কথা । মজার ব্যাপার তাঁর আবিষ্কারের মধ্যে ২০টি আবিষ্কারই আদতে কোন ওষুধ বা বড়ি। কোন কোন ওষুধের নাম একটি অভিযানেই আছে, কোনটি আবার বিভিন্ন অভিযানে ফিরে ফিরে এসেছে।

সবচেয়ে বেশি যে ওষুধটির নাম পাই সেটি হল মিরাকিউরল। ‘প্রফেসর শঙ্কু ও ইজিপ্সীয় আতঙ্ক’, ‘শঙ্কুর কঙ্গো অভিযান’, প্রফেসর রন্ডির টাইম মেশিন’ ‘মানরো দ্বীপের রহস্য’ ও শেষ শঙ্কু অভিযান ‘স্বর্ণপর্ণী’তে এর কথা পাই। মিরাকল কিয়র ফর অল কমপ্লেন্টস থেকে এই নাম। স্বর্ণপর্ণী গাছের পাতা থেকে তৈরি এই বড়ি সর্বরোগহর। বিষের ক্ষমতাকেও অকেজো করে দিতে পারে। এতে আছে পটাসিয়াম, ক্যালসিয়াম, ফসফরাস, আয়োডিন, আয়রন, অ্যালিল সালফাইড আর এমন একটা উপাদান রসায়নে যার পরিচয় নেই। ‘মহাকাশের দূত’ অভিযানে বিজ্ঞানী ফ্রান্সিস ফীল্ডিং-এর চোখে স্পিটিং কোবরার বিষ লাগলে শঙ্কু তাতে মিরাকিউরল মলম লাগিয়েছিলেন, অর্থাৎ বড়ি ছাড়া মলম হিসেবেও এর ব্যবহার ছিল। দ্বিতীয় যে বড়িটির কথা একাধিকবার পাই, সেটি এয়ারকন্ডিশনিং পিল, যা জিভের তলায় রাখলে বা পকেটে রাখলে (দুই গল্পে দুই রকম বলা আছে) শরীর শীতকালে গরম, আর গরমকালে ঠাণ্ডা থাকবে। খিদে মেটানোর জন্য শঙ্কু বানিয়েছিলেন বটফলের রস থেকে বটিকা ইন্ডিকা, যার একটা বড়িতেই চব্বিশ ঘণ্টা কাজ দেয়। তেষ্টা মেটানোর জন্য আছে তৃষ্ণাশক বড়ি, টি-পিল আর কফি-পিল। ঘুম পাড়ানোর জন্য শঙ্কু মহাভারতের জৃম্ভনাস্ত্র থেকে অনুপ্রাণিত হয়ে একটি বড়ি বানান, সে কথা ব্যোমযাত্রীর ডায়রিতে জানা যায়, কিন্তু সেটাই প্রফেসর শঙ্কু ও খোকা-র ঘুমপাড়ানি সন্মোলিন কিনা, তা বলা মুশকিল। তবে ঘুমতাড়ানি ট্যাবলেটও কিন্তু তাঁরই আবিষ্কার। স্নায়ু সতেজ করার জন্য শঙ্কু তৈরি করেছেন তরল ওষুধ নার্ভিগার, মাথা পরিষ্কার রাখার জন্য সেরিব্রিলান্ট আর মুহ্যমান অবস্থা কাটাতে নার্ভাইটা বড়ি। মানুষের ক্রমবিবর্তন প্রায় লক্ষগুনে বাড়িয়ে দেয় তাঁর এভলিউটিন ওষুধটি।এটি একজন মানুষকে ইঞ্জেক্ট করলে পাঁচ মিনিটের ভিতর তাঁর দশ হাজার বছরের বিবর্তনের চেহারা দেখা যায়। শকুনির বাচ্চার উপর গবেষণা করে শঙ্কু এমন এক ওষুধ আবিষ্কার করেন যা প্রয়োগ করলে মানুষের ঘ্রাণশক্তি বেড়ে আধ মাইল দূরের গন্ধ পাওয়া যায়। দুঃখের বিষয় সে ওষুধের কোন নাম দেন নি তিনি। যেমন নাম দেননি ব্রেজিলের মশা ও জ্বালাতুনে বারাকুদা মাছির হাত থেকে রক্ষা পাবার জন্য তৈরি মলমের কিংবা সেই ওষুধটির যা খেলে বেশ কয়েকঘণ্টা অদৃশ্য থাকা যাবে।

শুধু মানুষ কেন? পোষা বিড়াল নিউটনের জন্য ফিস পিল আর পোষা কাক কর্ভাসের জন্য পুষ্টিকর ভিটামিন দিয়ে মুখরোচক বড়িও প্রস্তুত করেছেন শঙ্কু। তবে ‘গোলক রহস্য’-এ যে অ্যানাইহিলিন বড়ি (যাতে দুশো সাতাত্তর রকম অসুখ সারে) আবিষ্কারের কারণ ঠিক বোঝা যায় না, শঙ্কুর মিরাকিউরল বড়ির ভাণ্ডারে কি টান পড়েছিল? হিপনোজেন, সুবর্ণ সুযোগ, কম্পু, আশ্চর্য জন্তু, নেফ্রুদেৎ- এর সমাধি ও ডন ক্রিস্টোবাল্ডির ভবিষ্যতবাণী কাহিনিতে কোন নতুন আবিষ্কারের কথা নেই।

আবার দেখুন ‘প্রফেসর শঙ্কু ও হাড়’ বা ‘শঙ্কুর পরলোকচর্চা’ গল্পে সেই শঙ্কুকেই দেখি ভূত, মাম্বো জাম্বো, কিংবা তথাকথিত আধিভৌতিক কীর্তিকলাপে বিশ্বাস করতে। আসলে যাকে বলে মুক্তমনা তেমনি মানুষ শঙ্কু। কোনও কিছুকেই চোখ বুজে বিশ্বাস বা অবিশ্বাসের কুঠুরিতে ঠেলে দেন না তিনি। জীবনে চলার পথে অবিনাশবাবুর (কোথাও তাঁর পদবি চ্যাটার্জি, কোথাও মজুমদার) মতো পড়শি পান তিনি। যিনি শঙ্কুর নানা আবিষ্কার নিয়ে ব্যাঙ্ক করলেও ‘স্বপ্নদ্বীপ’-এর অভিযানে শঙ্কুর প্রাণরক্ষা করেন। আছেন মাকড়দাবাসী ত্রিকালদর্শী নকুড়চন্দ্র বিশ্বাস-টেলিপ্যাথি, টরিডিং, অতীত দর্শন, ক্লেয়ার ভয়েন্স, ভবিষ্যৎ দর্শন-এত গুণসম্পন্ন বন্ধুই বা কটা মানুষের ভাগ্যে জোটে? বিদেশি বন্ধুদের মধ্যে সন্ডার্স আর ক্রোলের কথা তো বলাই বাহুল্য। নিজের ৩৮টি অভিযানের প্রত্যেকটিই শঙ্কু লেখেন তাঁর অতি প্রিয় ওয়াটারম্যান কলমে যার কালির রং ঘণ্টায় ঘণ্টায় বদলায়। ডায়রির পাতাও অদ্ভুত। আগুনে পোড়ে না, ছেঁড়ে না, কুকুরের কামড়েও অক্ষত থাকে (যদিও ডেয়ো পিঁপড়ের পছন্দের খাদ্য এই পাতাগুলি) আর তাই হয়তো ৩৮টি অভিযানের ৩৫টি শত্রুর মুখোমুখি হয়েও ক্ষতিগ্রস্ত হন না শঙ্কু। ডায়রির পাতার মতো অবিনশ্বর এক বন্ধুতা জড়িয়ে থাকে অভিযানগুলিতে। গল্প শেষেও যার অভিঘাত মন থেকে যাবার নয়। ব্যোমযাত্রীর ডায়রির পরবর্তী ১৩টি অভিযানের নামই ‘প্রফেসর শঙ্কু’ দিয়ে শুরু। ‘স্বপ্নদ্বীপ’ গল্পে সেই ধারায় ছেদ পড়ে।

পরবর্তীকালে নামে যতবার শঙ্কু এসেছেন, এসেছেন ‘প্রফেসর’ বাদ দিয়ে (ব্যতিক্রম প্রফেসর শঙ্কু ও ইউএফও) আসলে ততদিনে তো শঙ্কু এসে গিয়েছেন কিশোর হৃদয়ের আরও কাছাকাছি। যতদিন গিয়েছে বিবর্তিত হয়েছেন শঙ্কু, শুধুমাত্র ল্যাবরেটরির গণ্ডি ছেড়ে দুর্গম থেকে দুর্গমতর স্থানে গিয়েছেন তিনি। যদিও আশ্চর্য এই যে এত বছরে একবারও অস্ট্রেলিয়া, নিউজিল্যান্ড বা উত্তর আমেরিকায় যাননি। গল্পের সঙ্গে illustration এও বিবর্তিত হন শঙ্কু। প্রথম গল্পের নিধিরাম পাটকেল সুলভ প্রতিহিংসা পরায়ণ শঙ্কুর চেহারার সঙ্গে মিল নেই পরবর্তীকালের সৌম্য শঙ্কুর চেহারায়। সত্যজিৎ ব্যতিরেকে শিল্পী সমীর সরকারও এঁকেছেন শঙ্কুর দুটি অভিযান (শঙ্কুর পরলোকচর্চা, শঙ্কু ও ফ্রাঙ্কোনস্টইন) আর নানাভাবে গড়েপিটে শঙ্কু নিজেকে যে পর্যায়ে নিয়ে যান, তাতে সবচেয়ে উজ্জ্বল হয়ে ওঠে তার মানবতা, সকল গবেষণা, সকল অভিযান যদি মানবতায় ঋদ্ধ না হয়, তবে তো তা ব্যর্থ! তাই নাৎসিদের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ান তিনি, লড়াই করেন বিজ্ঞানের অপব্যবহারকারী বিজ্ঞানীদের বিরুদ্ধে। এই লড়াইয়ে কোথাও যেন আমরাও শামিল হয়ে যাই।

আর সেই কারণেই শঙ্কুর শেষ অভিযান ‘স্বর্ণপর্ণীতে শঙ্কুর বাবার উপদেশ যেন গোটা শঙ্কু কাহিনির swan song হয়ে দাঁড়ায় “যে ভাবেই রোজগার করিস না কেন, যারা দরিদ্র, যারা নিরক্ষর, যারা মাথা উঁচু করে চলতে পারে না, তাদের কথা ভুলিস না।”

লেখাটি আপনার ভাল লেগেছে?

লেখক পরিচয় |

কৃষি বিজ্ঞানী এবং লেখক। অনবদ্য কম্বিনেশন। লেখার হাতটিও সরেশ, ধরলে ছাড়া মুশকিল।

Start typing and press Enter to search