ছোট সমাধি টি সৈয়দ নাসিরুদ্দিন নামের এক মধ্যযুগের এক সুফি সাধকের। আর বড় টি ইয়ুজ আসফের, এবং এই ইয়ুজ আসফ কে নিয়েই রহস্য... পুরো পড়ার জন্য স্ক্রল করুন নিচে...

ইয়ুজ আসফের সমাধি এবং রহস্য ১

যিশু খ্রীস্ট কে ভারতীয় বললে খুব ভুল হবে?

কারণ আমারও মনে হয় তিনি জীবনের বেশীরভাগ সময় ভারতে কাটিয়েছিলেন। লেখাটা পড়ে আপনাদের মতামত দেবেন।

এই গল্প কাশ্মীরের তবে আজকের যুদ্ধ বিধ্বস্ত কাশ্মীরের নয়, এই গল্প কাশ্মীরের ভিতরে থাকা আরেক কাশ্মীরের, যার খোঁজ খুব কম লোকই জানে।

ঝিলাম নদীর ওপরে বাদশা কাঁদাল ব্রিজের ঠিক আগে ডানদিকের এক রাস্তায় পুরানা মহল্লা খানিয়ারা।ঘিঞ্জি, দারিদ্র আবার তার মধ্যেই শাহি হামাদান, জামা মসজিদ… বহু বিখ্যাত স্থাপত্য।

রোজা বাল নামের সমাধিও এই এলাকাতেই, একেবারে অখ্যাত এই সমাধি। পর্যটন দফতরের গাইডবুকে একে খুঁজে পাবেন না। দুই বিখ্যাত সাধকের সমাধি এই মসজিদ … ছোট সমাধি টি সৈয়দ নাসিরুদ্দিন নামের এক মধ্যযুগের এক সুফি সাধকের। আর বড় টি ইয়ুজ আসফের, এবং এই ইয়ুজ আসফ কে নিয়েই রহস্য।

মসজিদের ঢোকার পথে যেকথা খোদাই করা আছে, বহু শতাব্দী আগে তিনি কাশ্মীরে এসে ছিলেন।

পীর দের সমাধি উত্তর দক্ষিণে লম্বা লম্বি হয় এবং এটাই নিয়ম, কিন্তু এই ইয়াজু আসফের সমাধি পূর্ব পশ্চিমে আড়া আড়ি ভাবে রাখা … জেরুজালেম বা জেরিকো তে প্রাচীন কালে ইহুদিদের যে ভাবে সমাধি দেওয়া হতো। ইয়াজু আসফ কি তবে কাশ্মীরে আসা এক ইহুদি ধর্ম গুরু?

কিন্তু সমাধির উপর খোদাই করা পায়ের ছাপ দুখানি … বড়ই গোলমেলে, দুই পায়ের পাতাতে বড় বড় ক্ষত চিহ্ন … ক্রুস কাঠে কাউকে পেরেক গাঁথলে ঠিক যেরকম হবার কথা!তাহলে না না তা কিকরে সম্ভব, এ কখনো হতে পারে না।…….

ইরান, ইরাক তথা পশ্চিম এশিয়ার অনেক জায়গার উপকথা বলে যিশু ক্রিস্ট ক্রুসিফাইড হবার পরেও তিনি মরেন নি, বরং তিনি পালিয়ে শত্রুর চোখে ধুলো দিয়ে তিনি এশিয়ার নিচের দিকে পালিয়ে যান। পারস্যের উপকথা ও প্রাচীন ইতিহাসের সংকলন ফিরাং-ই-আসফিয়া, জামি-উত-তাহারিক ইত্যাদি গ্রন্থ এই সব কথারই সত্যতার দিকে ইঙ্গিত করে। এমনকি এও বলে যে এইসব যায়গায় তিনি ইয়াজু আসফ নামে পরিচিত ছিলেন।

তা উপকথা লোককথা এইসব গাল গল্পে কতটাইবা বিশ্বাস করা যায়? বাইবেলে এর কোনও ইঙ্গিত নেই… আর ঐ ভাবে ক্রুসবিদ্ধ হবার পরে কেউ কি বেঁচে থাকতে পারে,… সম্ভব?

বেশ তো উপকথা ছেরে দিন, মুঘল সম্রাট আকবরের সভাসদ আবুল ফজল তাঁর বই আইন-ই-আকবরী তে এই ইয়াজু ও ক্রিস্টো এর কথা উল্লেখ করেন, তাকি শুধুই মুখে মুখে চলে আসা একটি মিথ?

মিথ কেনও ?… আবুল ফজলের ও প্রায় ১৫০ বৎসর আগে ১৪১৩ সালে, কাশ্মীরের মুল্লা নাদিরি তারিখ-ই-কাশ্মীর গ্রন্থ রচনা করেন, তাতে তিনি জানান, রাজা গোপ-দত্তের আমলে পারস্যের এক স্থপতি শ্রীনগরের শঙ্করাচার্য মন্দির সংস্কার করেন। আদি শঙ্করাচার্য এখানে এসে এই মন্দির প্রতিষ্ঠা করেন। মোল্লা নাদির জানাচ্ছেন, পারস্যের সেই স্থপতি মন্দির সংস্কারের পর প্রাচীন পারসিক ভাষায় সেখানে খোদাই করেন-“ ৫৪ সালে এই সংস্কার সাধিত হল। ইয়ুজ আসফ এই সময় কাশ্মীরে তাঁর ধর্ম প্রচারে ব্যাপ্ত।তিনি ইয়ুজু আসফই জিশু , ইজরাইলের সন্তান দের উদ্ধারকর্তা।”

উপকথা, প্রাচীন ইতিহাসে বিশ্বাস রাখতে পারছেন না? বেশ, তবে জেনে রাখুন কোরানে পরিষ্কার জানাচ্ছে, ওরা(ইহুদিরা) মিথ্যা রটিয়েছিল, ক্রুসবিদ্ধ হয়ে তাঁর মৃত্যু হয়নি… “ না ওরা তাঁকে মারতে পারেনি। মেরি ও তাঁর পুত্রকে আমরা শান্ত পাহাড়ের কোলে, এক ঝরনার ধারে রেখে দিয়েছি।”

এমনকি এই ভারতেরই গুপ্ত যুগে সঙ্কলিত ভবিষ্যৎ পুরাণে প্রায় একই গল্প… রাজা বিক্রম-জিতের পৌত্র শালিবাহন বহিরাগত পার্সিয়ান শক, হুন দের দমন করছিলেন। একদিন ঘুরতে ঘুরতে বরফ ঢাকা পাহাড়ের নীচে এক শ্বেত বস্ত্র পরিহিত এক শুভ্রকেশই যোগী কে দেখেন, রাজা তাঁকে তাঁর পরিচয় জানতে চান … “তিনি বলেন তিনি ইশাপুত্র, কুমারী মায়ের গর্ভজাত। আপনারা যাদের ম্লেচ্ছ বলেন তাঁদের মধ্যে আমি সত্য-ধর্ম প্রচার করি।”

Series Navigationইয়ুজ আসফের সমাধি এবং রহস্য ২ >>

লেখাটি আপনার ভাল লেগেছে?

লেখক পরিচয় |

Start typing and press Enter to search