তিনি বলেছিলেন চার আর্যসত্য ও অষ্টাঙ্গিক মার্গ-এর কথা। কিন্তু তাঁর মহাপরিনির্বাণের পর তাঁর শিষ্যদের মতবাদের মধ্যে এত বিভিন্নতা চলে এল কোথা থেকে? কৌশিক সরকার ৭ টি খন্ডে বৌদ্ধধর্মের এই ভেঙ্গে যাওয়ার ইতিহাস বলেছেন। মোবাইলে পড়ার জন্য স্ক্রল করুন নিচে...

বৌদ্ধধর্মে যান মাহাত্ম্য ১ম খন্ড

আজ থেকে প্রায় ২৬০০ বছর আগে এক রাজপুত্র মতান্তরে ধনাঢ্য ও সমাজে প্রভাবশালী পরিবারের সন্তান জরা, মরণ ও দুঃখ থেকে পরিত্রাণের পথ খুঁজতে তাঁর সম্পদ ও রাজসুখ ছেড়ে গৃহত্যাগী হয়ে সন্ন্যাস গ্রহণ করলেন এবং দীর্ঘ ছয় বছর কঠোর সাধনার পর গৃহ থেকে বহু দূরে অধুনা গয়ার কাছে বুদ্ধগয়ায় এক অশ্বত্থ বৃক্ষের নীচে বোধিজ্ঞান লাভ করে বুদ্ধ হলেন। এরপরে তাঁর পরিনির্বাণ পর্যন্ত আগামী পঁয়তাল্লিশ বছর বহুজনের হিত ও সুখের জন্য এই বোধিজ্ঞান তিনি তাঁর হাজার হাজার অনুগামী ও শিষ্যদের মধ্যে প্রচারের মাধ্যমে এক ধর্মীয়, দার্শনিক, সামাজিক ও ঐতিহাসিক বিপ্লবের সূচনা করে নিজেকে ভগবান রূপে প্রতিষ্ঠিত করলেন। এই পর্যন্ত প্রায় আমরা সকলেই জানি। কিন্তু সঙ্গত কারণেই মনে প্রশ্ন জাগে যাঁর ধর্মশিক্ষার মূল বিষয় ছিল চার আর্যসত্য ও অষ্টাঙ্গিক মার্গ তাঁর মহাপরিনির্বাণের পর তাঁর শিষ্যরা হীনযান, মহাযান ও তাদের বিভিন্ন শাখাপ্রশাখায় দ্বিধাবিভক্ত হয়ে গেলেন কেন এবং তাঁদের মতবাদের মধ্যে এত বিভিন্নতা চলে এল কোথা থেকে? এখানে যান অর্থে কিন্তু যানবাহন নয়। এই যানের অর্থ পন্থ বা মত। আসুন ইতিহাস খুঁজে দেখি এই বিভিন্ন যানের উৎপত্তি কীভাবে হল।

আমাদের প্রথমেই জানতে হবে তথাগত বুদ্ধ যখন স্বয়ং এই জগতে উপস্থিত ছিলেন তখন কি কোন যান ছিল? অথবা তিনি নিজে কি কোন যানের কথা বলে গিয়েছেন? শুনতে আশ্চর্য লাগলেও তথাগত স্বয়ং দুটি যানের কথা বলে গিয়েছেন। শ্রাবক্যান ও প্রত্যেকবুদ্ধযান। তথাগত বুদ্ধ যখন এই জগতে উপস্থিত থাকেন তখন যিনি সরাসরি তাঁর কাছ থেকে উপদেশ গ্রহণ করে যথাক্রমে স্রোতাপন্ন, সকৃদাগামী, অনাগামী ও অর্হৎ হয়ে নির্বাণ প্রাপ্ত হন ও নিজের উদ্ধার সম্পন্ন করেন তিনি শ্রাবক। এই পদ্ধতিকে বলে শ্রাবক্যান। আবার বুদ্ধ যখন এই জগতে উপস্থিত থাকেন না তখন নিজের প্রচেষ্টায় নির্বাণ প্রাপ্ত হয়ে যিনি নিজের উদ্ধারকার্য সম্পন্ন করেন তিনি প্রত্যেকবুদ্ধ। এই পদ্ধতির নাম প্রত্যেকবুদ্ধযান। তথাগত বুদ্ধের জ্ঞাতিভ্রাতা দেবদত্তের যখন প্রয়াণ হয় তখন তথাগত বলেছিলেন, “দেবদত্ত তাঁর কৃতকর্মের জন্য কল্পকাল নরকযন্ত্রণা ভোগ করবেন এবং তারপর প্রত্যেকবুদ্ধ হয়ে জন্মগ্রহণ করে নির্বাণ প্রাপ্ত হবেন।” কিন্তু এই দুই যান এক সুরে বাঁধা। এদের মধ্যে কোন মতপার্থক্য নেই। শুধুমাত্র বুদ্ধ জগতে উপস্থিত থাকা অথবা না থাকার উপর ভিত্তি করে স্বীয় উদ্ধারকার্যে সচেষ্ট কোন ব্যক্তি কোন পন্থা অবলম্বন করতে বাধ্য হবেন তারই বর্ণনা মাত্র। কিন্তু হীনযান ও মহাযান সেরকম নয়। তাঁদের মধ্যে মতপার্থক্য আছে। আর এই মতপার্থক্যের বীজ কি তথাগতের জীবদ্দশাতেই কোথাও লুকিয়ে ছিল? চলুন দেখি ২৬০০ বছর আগের কুশিনারায় (অধুনা কুশিনগর), তথাগত বুদ্ধের পরিনির্বাণ স্থলে।

Series Navigation

লেখাটি আপনার ভাল লেগেছে?

লেখক পরিচয় |

কৃষ্ণনগরের স্থায়ী বাসিন্দা কৌশিক সরকারের লেখালেখির বাইরে আগ্রহের মূল বিষয় ডাকটিকিট সংগ্রহ, গান শোনা, বেড়িয়ে পড়া। বুদ্ধের জীবন ও বাণী বিষয়ে তার গ্রন্থ 'নমো তস্য' বিশেষভাবে প্রশংসিত।

Start typing and press Enter to search