হ্যাঁ, যিশু খ্রিস্টর জীবনের অনেক গুলি আবছা জায়গায় তিনি আলোকপাত করবার চেষ্টা করেন… যেমন বেথেল-হ্যামের সরাই খানায় যে শিশুটি জন্ম গ্রহণ করলো সে এক অসামান্য মানুষ এবং বহু মানুষর তিনি হবেন পথপ্রদর্শক তা যারা ঘোষণা করলেন বাইবেলে তাঁদের শুধু পূর্বের জ্ঞানী মানুষ বলেই থেমে গেছে। তিনি দাবি করেন এই ভবিষ্যৎ বক্তারা ভারত হতেই আসেন।

রাজা হেরাদের অত্যাচার থেকে বাঁচতে তিন বছরের শিশু কে নিয়ে জোসেফ ও মেরি পালিয়ে গেছিলেন মিশরে।এর পর আবার তাঁকে দেখা গেলো জেরুজালেমের মন্দিরে এবং তাঁর শাস্ত্রজ্ঞানে পুরহিতরাও মুগ্ধ। এর পর আবার তাঁকে দেখতে পাই যখন তাঁর বয়স তিরিশ। মাঝের সময় গুলি তিনি কোথায় ছিলেন, কি পড়লেন বা কোথায় শিখলেন এই ব্যাপারে বাইবেল অদ্ভুত ভাবে নিশ্চুপ।

আর এখানেই তিনি বলেন সেই সময় সমগ্র ইউরোপ বা এশিয়ার একমাত্র পঠন-পাঠনের স্থান ছিল ভারতের … বারানসী, উজ্জয়িনী বা নালন্দা। ফলে নিশ্চিত ভাবেই তাঁর ঐ অসাধারণ পাণ্ডিত্যর কারণ নিশ্চয় ভারত। এবং এই জাতীয় কথা উনিশ শতকের শেষ দিকে নিকোলাস নোটোভিচ নামে এক রুশ পর্যটক লাদাখের হেমিস গুম্ফায় এক প্রাচীন পুঁথির কথা বলেন… সেখানে ছিল, ইজরাইলে জন্মানো ঈশা ছোটবেলায় বনিকদের সঙ্গে সিন্ধু-দেশে আসেন। সেখানে তিনি বৌদ্ধ ধর্মগ্রন্থ ও বেদ-বেদান্ত অধ্যয়ন করেন। নিকোলাস সে কথা লিখতেই সারা ইউরোপে তোলপাড়। জার্মান পণ্ডিত ম্যাক্সমুলার রেগে গিয়ে তাঁকে প্রতারক বলে বসেন।

কিন্তু ফিস-ফিস থামল না। স্বামী বিবেকানন্দের সতীর্থ ও রামকৃষ্ণ-শিষ্য স্বামী অভেদানন্দও তাঁর তিব্বত সফরের কথা লিখতে গিয়ে জানালেন হেমিস গুম্ফার প্রধান তাঁকেও সেই প্রাচীন পুঁথি দেখান।

আবার এই রকম কথাও শোনা যায় শিব ভক্ত নাথ (গোরখনাথ, পার্শ্বনাথ) সম্প্রদায়ের সাধুদের মধ্যে সন্ত ইশানাথ ১৪ বছর ভারতে ছিলেন, পরে দেশে ফিরে তিনি এক চক্রান্তের শিকার হন, এবং তাঁকে ক্রুশে বিদ্ধ করা হয়। যোগবলে তিনি বেঁচে যান, এবং গুরু চেতনা-নাথের সাহায্যে তিনি ভারতে ফিরে আসেন। হিমালয়ের কোলে তিনি আশ্রম স্থাপন করেন এবং পরিণত বয়সে সেখানেই দেহ ত্যাগ করেন।

এই ফিসফিসানিটারই এবার হোলগার কারস্টেন ঐতিহাসিক কাঠামো দেবার চেষ্টা করছেন। তিনি বলেন জোসেফ ও মেরি যখন মিশরে আসেন, সেখানে তখন একলক্ষ ইহুদির বাস এবং কয়েকশো বৌদ্ধ বিহার। যিশুর বাবা এবং মা “এসেন” (Essenes) গোষ্ঠীর লোক ছিলেন। বৌদ্ধদের প্রভাবে ঐ গোষ্ঠীর সন্ন্যাসীরাও বিয়ে করতেন না, এবং মন্দিরে বলি বা ঐ সব কারণে মন্দিরে রক্তপাতের ঘোর বিরোধী ছিলেন, তাছাড়া চুরি না করা, মিথ্যা কথা না বলা, ব্যভিচার না করা … বৌদ্ধদের মতো অষ্টাঙ্গিক মার্গ মেনে চলতেন। প্রসঙ্গত, যিশুর দীক্ষা গুরু সন্ত জন-ও “এসেন”।

জর্ডন নদীর জল ছিটিয়ে তিনি যিশুকে দীক্ষা দিয়ে ছিলেন, এই রকম কোনও প্রথা ইহুদিদের ছিলোনা। বরং বৌদ্ধ সন্ন্যাসীরা নতুন শ্রমণদের ঐ ভাবে দীক্ষা দিতেন।

এবং এই গল্পে বার বারই কাশ্মীর যায়গা ওঠে এসেছে, এবং হোলগার সাহেব তাঁকে অত্যন্ত গুরুত্ব দিয়েছেন। ওল্ড টেস্টামেন্টে রয়েছে ইহুদিদের আদি পুরুষ আব্রাহাম “হারান” শহরে থাকতেন, এতদিনের ধারনা ছিল হারান মেসোপটেমিয়া তেই হবে। কিন্তু হোলগার বলছেন শ্রীনগরের কিছু দূরে “হারা-ওয়ান”ই সেই “হারান”। ওল্ড টেস্টামেন্টে আছে, “বেথ পিওর” অঞ্চলের সামনের উপত্যকা দিয়ে তাঁর ঈশ্বররে দেশে যান।হোলগার বলছেন কাশ্মীরের ঝিলাম নদীকে প্রাচীন ফরাসি ভাষায় বলা হতো “বেহাত”, এবং ঝিলাম যেখানে উলার হ্রদের সঙ্গে মিশেছে তারই নাম “বেহাত-পিওর”।

গত কয়েক দশক ধরে বিচিত্র সব প্রমাণ ও মিল তিনি খুঁজে বের করে চলেছেন, কাশ্মীরের শিকারা গুলিতে বইঠা গুলি পান পাতার মতো বা হৃদয়ের মতো, বা এখান কার বাসিন্দারা সন্তান হলে ৪০ দিনের আঁতুড় পালন করে এই সবই প্রাচীন ইহুদি প্রথা।সবচেয়ে বড় কথা এখান কার প্রাচীন কবর গুলি ইহুদিদের মতোই পূর্ব-পশ্চিমে। পরে ইসলাম আসবার পরে কাশ্মীরিরা মুসলিম ধর্ম গ্রহণ করলেও তাঁরা পূর্বে ইহুদি সভ্যতারই উত্তরাধিকার বহন করে চলেছে।

এই লেখা টা লিখতে লিখতে কেমন যেন মনটা মোচর দিয়ে উঠছে, তা কি আমার ভরতের জন্য যে প্রায় এই পৃথিবীর সকল ধর্মের সকল মানবজাতির কাছে মায়ের মতোই গভীর মমতায় রক্ষা করেছে। আজ এই আধুনিক যুগে যেখানে জিনোম- সিকোয়েন্স বারংবার প্রমাণ করছে … সমগ্র মানুষ জাতি এই ভূভাগের থেকেই বিজয় রথ হেঁকে ছিল, সারা পৃথিবীময়। কিন্তু সমগ্র মানব সমাজ তাঁকে ভুলে গেছে, লাঞ্ছিত, অপমানিত করেছে বার বার। আর আমরা এই দেশেই জন্মে এই দেশেরই সর্বনাশ করবার কথা বলি, এবং দোহাই দেই আমার বাক স্বাধীনতার।

লেখাটি আপনার ভাল লেগেছে?